মসজিদটি তৈরী করেছিলেন এক হিন্দু রাজা। রোজার সময়ে সেখানে ইফতারের ভোজ খান অমুসলিমরাও। মসজিদটি তিরুঅনন্তপুরমে। শহরের মাঝামাঝি রয়েছে মসজিদটা। ধবধবে রং। ঠিক এখানেই রয়েছে আরও দুটি জিনিস। কি সেটি? মসজিদতটির একপাশে রয়েছে একটি গনেশের মন্দির অন্যদিকে রয়েছে একটি গির্জা। এ যেন সর্বধর্ম সমন্বয়ের তীর্থক্ষেত্র। কে বলেছে মসজিদ শুধু মুসলিমদের জন্য। এই মসজিদে কিন্তু ইফতারের ভোগ খান মুসলিম-অমুসলিম সকলেই। ধাতবপাত্রে নিশ্চিন্তে পান করেন ‘নম্বুকাঞ্জি’। তারপর যে যার মতো বেড়িয়ে যান।
মসজিদের নাম পাটলাপল্লি। মানে সেনাবাহিনীর মসজিদ। ২১৩ বছর আগে বানিয়েছিলেন করদ রাজ্য ত্রভাঙ্কোরের এক হিন্দু রাজা। তাঁর সেনাবাহিনীতে থাকা মুসলিম সেনাদের যাতে ধর্ম চর্চায় কোনও সমস্যা না হয়, তাই এই মসজিদটির নির্মান হয়েছিল। রাজ্যের মাঝামাঝি এলাকায় ছিল একটি গণেশ মন্দির। রাজা মসজিদটি তৈরি করেছিলেন ঠিক তার পাশেই। ছোট্ট পাতা ছাওয়া সেই মসজিদে অবশ্য মিনার বা ডোম কিছুই ছিল না। ছিল শুধু একটি ঘর। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার জন্য। প্রায় দেড়শো বছর পর ১৯৬০ সালে সেই মসজিদই পদ্মফুলের নকশা তোলা মিনার আর ডোমে সেজে ওঠে ঝাঁ চকচকে হয়ে। আর এখন সেই মসজিদই ধর্মনিরপক্ষতার আদর্শ নিদর্শন।
কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের পালায়ামে ইফতারের সময়ের মূল আকর্ষণ এই মসজিদই। জানা গিয়েছে, রমজান চলাকালীন প্রতিদিন ১২০০ পাত্র কাঞ্জি সরবরাহ করেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। ভাত, ঘি-সহ ২০টি উপকরণ কাঠের আঁচে মাটির হাঁড়িতে রান্না করে তৈরি হয় এই কাঞ্জি। যা ঔষধি বলে বিখ্যাত। সেই কাঞ্জি খেতেই ভিড় জমে মুসলিম তো বটেই অমুসলিমদেরও। খেজুর, মরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, মেথি, ধনে, রসুন, মৌরি, জিরা, আনারস, টমেটো ইত্যাদি দিয়ে যে খাবারটি তৈরি হয়।
এছাড়াও অনেকটি উল্লেখ্য বিষয় হলো ভিন্ন ধর্মের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে ইফতার পালনের পাশাপাশি পরিবেশ বাঁচানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই মসজিদ। প্লাস্টিক বর্জন নীতিকে মেনে চলা হয় এই মসজিদে। ধাতব পাত্র বা ইকোফ্রেন্ডলি পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হয়।